অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনা, অসহায় রোগীদের আর্তনাদে রাতারাতি বদলে যায় হাসপাতালের চেনা ছবি

আর্তনাদে

অভিশপ্ত ট্রেন দুর্ঘটনা, অসহায় রোগীদের আর্তনাদে রাতারাতি বদলে যায় হাসপাতালের চেনা ছবি। শুধু শোনা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষের আর্তনাদ। দোহামনি ভয়ংকর দুর্ঘটনায় একটি কামড়া দুমড়ে মুচড়ে অপর একটি কামরার ওপর উঠে পড়ে। আর সেই দুই কামড়ার মাঝের থেঁতলে যেখানে মিশেছে সেখানেই পিষে যায় কিশোরের একটি পা। গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে তাকে বের করে আনার কাজে নিযুক্ত উদ্ধারকারী দলকে কাকুতি জানিয়েছিল আমার পা কাটবেন। তবে পায়ের থেঁতলে যাওয়া মাংসপিন্ড সেখানেই ঝুলে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তড়িঘড়ি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আনলেও শেষে কিশোরের এক পায়ের অংশ কেঁটে বাদ দিতে হয় চিকিৎসা স্বার্থে। পায়ের জখমের অত্যন্ত খারাপ পরিস্থিতি বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

 

চিকিৎসার স্বার্থে পায়ের ক্ষত অংশ কেটে বাদ পড়েছে তার। ও জানে না ওর পা টা আর নেই বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন কাকা দুর্যোধন ওঁরাও। তার কাকা জানান কোচবিহারের বাসিন্দা ১৭বছরের কিশোর মানিক ওঁরাও তার বাবা মঙ্গল ওঁরাও, মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে পাটনা থেকে ফিরছিল। টিভিতে খবর দেখে মানিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তবে রিংয়ের পর রিং হয়ে গেলেও ফোন না তোলায় বিপদের আশঙ্কা ঠাহর করেছিলাম।

 

তবে সবই শেষ হয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি! রেলের স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে ভাইপোর খোঁজ না পেয়ে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে যাই সেখান থেকে জলাপাইগুড়ি হাসপাতাল। কোথাও মেলেনা। এর মাঝেই মানিকের বাবা মঙ্গল ওঁরাওয়ের মৃত্যুর খবর মেলে।শুক্রবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে উৎভ্রান্তের মতো ছুটে এসে এমার্জেন্সি সামনে বসে থাকা ছোট ছোট ডাক্তার ছেলেদের কাছে নাম বলতেই তারা জানায় এখানে ভর্তি করা হয়েছে মানিককে। ভাইপোর পা কাটা পড়েছে তা এখনও জানে না, ওর বাবা মৃত্যুর খবরও জানানো হয়নি।

 

সবটা জানতে পারলে ছেলেটাকে বাঁচানো যাবে না। অন্যদিকে রাজস্থান নিবাসী গুরুতর আহত দুই রুগীর পরিবারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি রাজস্থান সরকার। তবে তারা চেষ্টা করছে বলে জানায় ওই রাজ্যের স্থিতির খোঁজ নিতে আসা দুই মন্ত্রী। রাজস্থান নিবাসী ধর্ম রাজ চৌধুরীর বা পায়ে আঘাত রয়েছে। রাজস্থানের নাওয়াগাসির বাদিন্দা অপর আহত ঈশ্বর শর্মার ডান পায়ে চোট রয়েছে। রেল মন্ত্রীর পর্যবেক্ষণে গেলে মন্ত্রীর কাছে ভয়ে আর্তনাদে অঝোরে কেঁদে ওঠেন তিনি। এখনও পরিবার তাদের কোনো খোঁজ জানে না, মন্ত্রীর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি কোনোক্রমে বলেন পরিবারকে খবর দিন দুদিন হয়ে গেল।

 

আর ও পড়ুন    সেক্স টয় কিনতে গিয়ে প্রতারনার জালে অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক

 

আবার মাথার গভীর চোট নিয়ে কোচবিহার নিবাসী জখম হরি সাহানিকে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালেও তার ভালো বিজয় সাহানি বলেন রেলের তরফে এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ মেলেনি। রক্তের সঙ্কট রয়েছে। পুরো চিকিৎসা করার মত সাধ্য আমাদের নেই। যদিও রেল মন্ত্রী অশ্বিন বৈষ্ণ জানান সকলকে ঘটনার পরই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। যারা পাননি তাদের সকালে আরপিএফ এসে টাকা দিয়ে গিয়েছে। যদিও হাসপাতালের শয্যায় প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চলা রুগীদের নগদ টাকা দিয়ে যাওয়াকে ভালো চোখে নিচ্ছেনা চিকিৎসকেরা।

 

রুগীদের হিসেব-নিকেশ বোঝার মত মানসিকতা থাকে না একইসঙ্গে অন্যান্য রুগীরাও রয়েছে বলে সে ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে। মহিলা জয়ন্তী মন্ডলের মাথার ও ডান পায়ে গভীর ক্ষত রয়েছে। তারসঙ্গে ছিলেন দেওর পচা বর্মন। জয়ন্তী দেবীর ভাই কৃষ্ণ বর্মন পচার মৃত্যু হয়েছে। কোচবিহারের আবার বৃহস্পতিবার রুগী আদিরাজ মল্লিক- হাসপাতালে পেটের অস্ত্রপচারের কারনে বেশকিছুদিন ধরেই চিকিৎসাধীন রুগী।

 

এদিকে কোচবিহারের বাসিন্দা লক্ষণ সিংয়ের মাথায় ও কানে চোট রয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে। অন্যদিকে রাতের পর থেকেই চারিদিকে আর্তনাদ। রাতারাতি বদলে যায় হাসপাতালে ইমারজেন্সি বিভাগের চেনা ছবি। আর্তনাদে