‘পৃথিবী নয়, সূর্যই হল সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু’, কথাটির অমান্য করেছিলেন বহুজন

১৯ ফেব্রুয়ারি, ‘টলেমির ভূ-কেন্দ্রিক ব্রম্ভান্ডের বদলে সূর্য-কেন্দ্রিক ব্রম্ভান্ডের প্রকল্প’, এটাই ছিল নিকোলাস কোপার্নিকাসের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তৎকালীন ধর্মীয়সংস্থাগুলির বিরাগভাজন হওয়ায় এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তটি সহজেই প্রকাশ করতে পারেননি কোপার্নিকাস। অবশেষে ১৫৪৩ খ্রীস্টাব্দে তার গবেষণালব্ধ ফলাফলসমৃদ্ধ গ্রন্থ “On the Revolutions of Heavenly Spheres” প্রকাশিত হলো। তার এই গ্রন্থটি বিজ্ঞান বিপ্লবের বীজটি বপন করেছিল। এঙ্গেলসের কথায় – “এ বই ধর্মতত্ত্ব থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মুক্তির যুগের সূচনা করে’।

নিকোলাস কোপার্নিকাস একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মতবাদ প্রদান করেন। যেখানে তিনি পৃথিবী নয় বরং সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেন।এই বিশেষ বিজ্ঞানীর জন্ম আজকের দিনে অর্থাৎ ১৪৭৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পোল্যান্ড সাম্রাজ্যের রয়েল প্রুসিয়া প্রদেশের থর্ন শহরে। বাবা একজন বণিক ছিলেন। মা ছিলেন তোরণের একজন ধনী বণিকের মেয়ে। নিকোলাস চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। কোপার্নিকাস ল্যাটিন ও জার্মান ভাষায় সমান দক্ষ ছিলেন, সাথে তিনি পোলিশ, গ্রিক এবং ইতালিয়ান ভাষাতেও কথা বলতে পারতেন। তবে তিনি কাজ করেছেন বেশিরভাগ ল্যাটিন ভাষায়। কারণ, তখনকার দিনে ইউরোপের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাটিন ভাষা ব্যবহৃত হতো। এছাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ ও পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় আদালতের প্রধান ভাষা ছিল ল্যাটিন।

বহু বছর আগে গ্রিক যুগের একজন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমি বলেছিলেন, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রগুলো আবর্তিত হয়। এই মতবাদ সম্পর্কে কোপার্নিকাস সন্দেহ প্রকাশ করেন।যেহেতু সে সময় টেলিস্কোপ ছিল না, তাই গাণিতিক পদ্ধতি ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে তিনিই প্রথম বলেন, পৃথিবী নয়, সূর্যই হল সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু। সূর্যই সমগ্র সৌরজগতকে আলোকিত করে। তার মতবাদের নাম- ‘কোপার্নিকীয় মতবাদ’। এ বিপ্লবাত্মক মতবাদ লিপিবদ্ধ হওয়ার দীর্ঘ প্রায় তেরো বছর পর এটি প্রকাশিত হয় ১৫৪৩ সালে। তার মৃত্যুর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে। এতে কোপার্নিকাস আরও বলেন, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘোরে বলেই ঋতু পরিবর্তন সম্ভব। আর পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ওপর আবর্তিত হয় বলেই দিনরাত্রি সংঘটিত হয়।১৫৪২ সালের শেষের দিকে কোপার্নিকাস হঠাৎ প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন এবং ২৪ মে ১৫৪৩ সালে ৭০ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়।