বিশ্বে একমাত্র কলকাতার ঝুলিতে রয়েছে ৬টি নোবেল ও ১টি অস্কার!

১০ জানুয়ারি, কল্লোলিনী তিলোত্তমা! আমাদের প্রিয় শহর কলকাতা, যার আদি নাম ছিল কলিকাতা। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর এবং ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হল কলকাতা। এই শহর পূর্ব ভারতের শিক্ষা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। জনসংখ্যার নিরিখে বৃহত্তর কলকাতা ভারতের ৩য় সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চল। বৃহত্তর কলকাতার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক (আনুমানিক) ৬০ থেকে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী (ক্রয়ক্ষমতা সমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জিডিপি অনুযায়ী)। এই সূচক অনুযায়ী ভারতে কলকাতার স্থান মুম্বই ও নতুন দিল্লির ঠিক পরেই।

এই শহর বাংলা তথা ভারতের ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্যপূর্ণ এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে। সাহিত্য, থিয়েটার, শিল্পকলা ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এই শহর এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্য বহন করে আসছে। কলকাতার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজন নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিতও হয়েছেন। বলা বাহুল্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্র এই কলকাতা শহর।

সব মিলিয়ে নতুন-পুরোনোর রঙে-ঢং-এ এবং সাবেকিয়ানা ও আধুনিকতার আভিজাত্য মেশানো স্মৃতিবিধুর কলকাতা আমাদের প্রাণের শহর তিলোত্তমা। সবকিছুর বদল হলেও কলকাতা আছে সেই কলকাতাতেই। দেশবাসীকে নানান উপহার দিয়েছেন কলকাতা থেকে উঠে আসা বহু প্রসিদ্ধ ব্যক্তিগণ।নানান গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান, কবিতা, সিনেমা -সহ বহু জিনিসের সঙ্গে সাক্ষাৎকরেছি আমরা সাথে আনন্দ উপভোগ করেছি, আর এই সব আমাদের দিয়েছে এই কলকাতা।প্রায় ৫০ জনেরও বেশি প্রসিদ্ধ কবি – লেখক, ৩০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী, প্রায় ২০ জন পরিচালক, যাঁদের জন্ম হয়েছে এই কলকাতায়।সম্প্রতি আরও এক বাঙালি নোবেল পাওয়ার পর নতুন ইতিহাস রচনা করেছে শহর কলকাতা।শুনলে অবাক হবেন, গোটা বিশ্বে কলকাতাই এক এবং একমাত্র শহর যার ঝুলিতে রয়েছে ৬টি নোবেল ও ১টি অস্কার! বিশ্বমঞ্চের আর কোনও শহরের এই কৃতিত্ব নেই।

এই ছয় জন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের নাম হল-

স্যার রোনাল্ড রস (১৮৫৭-১৯৩২), কলকাতায় এসে তিনি মেডিসিন নিয়ে নিজের রিসার্চ শুরু করেন এবং সাফল্য অর্জন করেন রোনাল্ড। ১৯০২ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। সেটি কলকাতার প্রথম নোবেল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১), প্রথম ‘নন-ইউরোপিয়ান’ এবং ‘নন-ওয়াইট’ হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান বাঙালির গর্ব কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নিজের সৃষ্টি গীতাঞ্জলীর ইংরেজি অনুবাদের জন্য এই সম্মানে ভূষিত হন তিনি।

সি ভি রামান (১৮৮৮-১৯৭০), শুধু কলকাতা নয়, গোটা এশিয়া মহাদেশে প্রথম হিসেবে ১৯৩০ সালে বিজ্ঞানে নোবেল পান চন্দ্রশেখর ভেঙ্কাটা রমণ বা সিভি রমণ।

মাদার টেরেসা (১৯১০-১৯৯৭), আলবেনিয়ান খ্রীষ্টান মাদার টেরেসা ১৯৭৯ সালে শান্তির জন্য নোবেল পান। গরীবদের নিয়ে যে কাজ তিনি করে গিয়েছেন তা গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণস্বরূপ।

অমর্ত্য সেন (জন্ম ১৯৩৩), ১৯৯৮ সালে প্রথম বাঙালি অর্থনীতিবিদ হিসেবে নোবেল পান অমর্ত্য সেন।

অভিজিৎ ব্যানার্জী (জন্ম ১৯৬১), সম্প্রতি ২০১৯-এ ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে এমআইটি-তে কর্মরত অভিজিত্‍ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেনের পরে দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন।

কলকাতা, বাংলার ও বাঙালির একমাত্র অস্কারজয়ী হলেন বিশ্বখ্যাত পরিচালক সত্যজিত্‍ রায়। ১৯৯২ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে অস্কার জয় করেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি অস্কার মঞ্চে উপস্থিত না থাকতে পারায় কলকাতায় এসে তাঁকে অস্কার দিয়ে যায় অ্যাকাডেমি। বিশ্ব চলচিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ অস্কার পান সত্যজিত্‍ রায়।