ভুতেদের আলাদা আলাদা নামের কারণ কী?

আলাদা

ভুতেদের আলাদা আলাদা নামের কারণ কী? ভুত! শব্দটা শুনলেই শরীরটা কেমন শিউড়ে ওঠে।  মনে হয়, এই হয়তো পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে বা এই হয়তো ঘাড়টা কেউ মটকে দিল বলে। তবে আধুনিক মনষ্ক মানুষ বা বিজ্ঞানমঞ্চের কাছে বাস্তবে ভূত বা আত্মার কোনও স্থান নেই। তাঁদের মতে, এটা নিত্যান্তই মানুষের মনের ভুল।

 

ভুতদের দেখতে কেমন? তাদের কটা পা, কটা হাত, কটা মাথা বা আদৌ মাথা রয়েছে কিনা? এই সব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। মনে ভয় থাকলেও, ভুতের গল্প শুনতে বা ভুতের সিনেমা দেখতে ভালবাসেন অনেকেই। রাতের অন্ধকারে ভূতের গল্প শুনতে যেমন ভাল লাগে, তেমনই সেই অন্ধকারেই একটা ছায়া দেখলে শরীরটা ছ্যাঁৎ করে উঠে বৈকি।

 

প্রচলিত ধারণায় বা বাংলা মতে বিভিন্ন ধরণের ভুতের নাম চারপাশে কান পাতলেই শোনা যায়। মামদো থেকে শাকচুন্নি, ডাইনি থেকে স্কন্ধকাটা নাম শুনলেও, তাদের দেখার ইচ্ছা রয়েছে এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। কিন্তু অনেকেরই মনে প্রশ্ন রয়েছে, তাদের দেখতে কেমন? তাদের আলাদা আলাদা নামের কারণ কী?

 

শাকচুন্নি
সংস্কৃত শব্দ ‘শাকচুরনী’ থেকে এসেছে প্রচলিত এই ভুতের নামটি। শোনা যায় যে, বিবাহিত নারীরা মৃত্যুর পর এই ভুতের রূপ নেয়। সাদা শাড়ি, হাতে শাঁখা-পলা পরিহিত অবস্থায় এরা রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় বিবাহিত নারীদের ওপর ভর করে শাকচুন্নীরা। কারণ এদের লক্ষ্যই থাকে সধবা মহিলাদের মতো জীবনযাপন করার এবং স্বামীর সঙ্গে বিবাহিত জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করার।

 

মেছোভূত
এই ভুত নিয়ে বাংলায় অনেক গল্প প্রচলিত রয়েছে। সাধারণত মাছ খেতে ভালবাসে বলে এই ভুতদের ‘মেছোভুত’ নামে অভিহিত করা হয়। শোনা যায়, গ্রামের পুকুরের পাশের গাছে, যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে এদের বসবাস। গ্রামের অন্ধকার রাস্তা বা নির্জন বাঁশবাগানের মধ্য দিয়ে মাছ কিনে ফিরলে এই মেছোভূতদের উপদ্রবের মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে এদের উৎপাতের গল্প শুনতে পাওয়া যায়।

 

আর ও পড়ুন  করোনায় আক্রান্ত টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

 

ডাইনি
‘ডাইনি’ কোনও আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। এরা সাধারণত বৃদ্ধ নারী হন। এরা ‘কালো জাদু’র সাহায্য নিয়ে বা ডাকিনী বিদ্যার সাহায্যে প্রতিপক্ষের ক্ষতি করে। বয়স বাড়লেও ডাকিনী বিদ্যার মাধ্যমে এরা নিজেদের যৌবন ধরে রাখতে পারে। ছেলেদের মন ভুলিয়ে নিজেদের ফাঁদে ফেলে। প্রচলিত রয়েছে, গ্রামের ছোট ছেলে মেয়েদের ভুলিয়ে নিয়ে যায় এরা। তারপর হত্যা করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে বছরের পর বছর বেঁচে থাকে।

 

নিশি
ভুত সমাজে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসাবে গণ্য করা হয় নিশিকে। প্রচলিত কথায়, কোনও কুচক্রী তান্ত্রিক তার শত্রুকে শায়েস্তা করার জন্য নিশির সাহায্য নেয়। গভীর রাতে শিকারকে তার প্রিয় মানুষের গলায় নাম ধরে ডাকে নিশি। তাকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। তাপর আর বাড়ি ফেরে না সেই ব্যক্তি। লোককাহিনী মতে, নিশিরা দুই বারের বেশি কাউকে ডাকতে পারে না। ফলে বলা হয়, রাতেরবেলা তিনবার নিজের নামে ডাক শুনলে তবেই আওয়াজ করা উচিত।

 

পেত্নী
বাংলা মতে পেত্নী হল নারী ভূত। অতৃপ্ত আশা নিয়ে বা অবিবাহিত অবস্থায় যে নারীরা মৃত্যুবরণ করেন, তাঁদেরই পেত্নী বলে অভিহিত করা হয়। সংস্কৃতের ‘প্রেত্নী’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে ‘পেত্নী’ শব্দটির। পেত্নীরা সাধারণত মৃত্যুর পরেও খারাপ অভিসন্ধি পূরণে পৃথিবীতে বিচরণ করে। এরা সাধারণত ভীষণ বদমেজাজি হয় এবং কাউকে আক্রমণের উদ্দেশ্য নিয়েই ঘুরে বেড়ায়।

 

মামদো ভুত
হিন্দু মতে, মুসলমান ব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মাকে ‘মামদো’ নামে ডাকা হয়। অনেকে এদের ‘জিন’ বলেও ডাকেন।

 

স্কন্ধকাটা
স্কন্ধ মানে ‘মাথা’৷ মাথা থাকেনা বলেই এই ভূতদের ‘স্কন্ধকাটা’ বলা হয়। মাথা কাটা গিয়েছে এমন লোকদের আত্মাই স্কন্ধকাটা ভূতে পরিণত হয়। বিশেষ করে রেল দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছে এমন ব্যক্তিরা স্কন্ধকাটা ভূতের রূপ নেয়। প্রচলিত কথা অনুযায়ী, এই ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথার খোঁজ করে।এছাড়াও গেছোভূত, আলেয়া, বেঘোভূত ও কানাভুলোর মতোও নাম শোনা যায় বাংলা পূরাণে।