কাজাখস্তানে বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্র সেনাকে গুলির নির্দেশ

কাজাখস্তানে

কাজাখস্তানে বিক্ষোভকারীদের দেখা মাত্র সেনাকে গুলির নির্দেশ ।  মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও তেলসমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া সহিংস বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ থামেনি। সাধারণ বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এদিকে বিক্ষোভ দমাতে ৩ হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারীকে আটক করেছে কাজাখ সরকার। বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

এ ছাড়া শান্তি ফেরানোর কথা বলে ইতোমধ্যেই দেশটিতে রুশ জোটের সেনাবাহিনী পৌঁছেছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।উল্লেখ্য, গত শনিবার নতুন বছর প্রথম দিনেই কাজাখস্তানে জ্বালানির দাম এক লাফে দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই দিনই মানজিস্তাউ শহরে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। দ্রুত সেই বিক্ষোভ দেশের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে তা গণবিদ্রোহের চেহারা নেয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেন।

 

শুক্রবার সকালে কাজাখস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্যে নিহত বিক্ষোভকারীদেরকে ‘সশস্ত্র অপরাধী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কাজাখ নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৪৮ জন।

 

এদিকে কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে সহিংসতার একটি ভিডিও সামনে এনেছেন বিবিসির একজন সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার রাতের ওই ভিডিওতে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। অস্থিতিশীল এই পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।অবশ্য দেশের সঙ্কটময় এই পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীলতার জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেছেন কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। তবে তার এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি সামনে আনেননি।

 

আর ও পড়ুন      আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শিখরে ছুঁয়ে ফেলবে করোনা-স্ফীতি

 

দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও) চুক্তির আওতায় দেশটিতে সেনাবাহিনী পাঠাতে রাশিয়ার কাছে অনুরোধ করেন প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশগুলো হলো- বেলারুশ, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও আর্মেনিয়া। বৃহস্পতিবার রুশ নেতৃত্বাধীন জোটের সেনারা কাজাখস্তানে পৌঁছায়। অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রুশ সেনারা রাস্তায় নামলেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ থামার লক্ষণ নেই। বিক্ষোভকারীরা আলমাটির বিমানবন্দর দখল করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কাজাখ পুলিশের মুখপাত্র সালতানেত আজিরবায়েকের দাবি, এই বিক্ষোভে সাধারণ মানুষ নেই। একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বিক্ষোভে মদদ দিচ্ছে। বিক্ষোভের নামে তা-ব চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আর তাই বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

 

গণবিক্ষোভ সামাল দিতে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ কোনো সতর্কীকরণ ছাড়াই সৈন্যদের গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিভিশনে এক ভাষণে তিনি বলছেন, কাজাখস্তানের পরিস্থিতি মূলত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু তার ভাষায়, সন্ত্রাসীদের দেখামাত্রই গুলি করা হবে। যারা আত্মসমর্পণ করবে না, তাদের সবাইকে নির্মূল করার হুমকি দেন তিনি।