কোভিড ১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতা

নতুন দিল্লি, ৭ মে, ২০২১:কোভিড ১৯ মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ দেশের বিভিন্ন অংশে যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে, সশস্ত্র বাহিনী তার থেকে দূরে থাকতে পারেনা । এই মহামারির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালাতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও একজোট হয়েছেন ।

কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী, প্যারামেডিকেল কর্মীদের এই সঙ্কটের সময় বিভিন্ন জায়গায় পাঠান হচ্ছে । এছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম বিমানে বা জাহাজে করে নিয়ে আসা হচ্ছে । ডিআরডিও নতুন দিল্লি, পাটনা, আমেদাবাদ, লক্ষ্ণৌ সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতাল গড়ে তুলছে । বারাণসীতে এধরণের হাসপাতালে সশস্ত্র বাহিনীর ৫-শো জন চিকিৎসক ও নার্স কাজ করছেন । অস্থায়ী কোভিড কেয়ার কেন্দ্রগুলিতে পিপিই কিট পরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সারাদিন সংক্রমিতদের চিকিৎসা করছেন । সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সুশ্রূষা করার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় অসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করছে । বলাই বাহুল্য যারা চিকিৎসার কাজে সাহায্য করছেন, তাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, মাঝ সমুদ্রে কিংবা আকাশপথে সামরিক দক্ষতা অত্যন্ত উচ্চমানের । সঙ্কটের এই সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর এই সব সদস্যরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । বাহিনীর ৯৮ শতাংশ সদস্যরই টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে । এখন তারা প্রশাসনকে নানা ভাবে সাহায্য করছেন । সশস্ত্র বাহিনীর হাসপাতালগুলিতে মানব সম্পদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও সেখানে সংক্রমিতদের চিকিৎসা চলছে । দেশ-বিদেশের নানা জায়গা থেকে দেশের যেসব অঞ্চলে কোভিডের সংক্রমণ বেশি সেখানে সেনাবাহিনীর গাড়ি, নৌবাহিনীর জাহাজ এবং বিমান বাহিনীর উড়ানগুলি অক্সিজেন জেনারেটর, পরীক্ষাগারের সরঞ্জাম সহ চিকিৎসার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে যাচ্ছে । এছাড়াও জার্মানি, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ওমান, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী তরলীকৃত অক্সিজেন জেনারেটর ও কনসেন্ট্রেটর নিয়ে আসছে । বাহরিন, কুয়েত, কাতার এবং সিঙ্গাপুর থেকে নৌবাহিনীর জাহাজগুলি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে আসার পাশাপাশি আমাদের দ্বীপগুলিতে নানা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে । সেনা বাহিনীর টাট্রা গাড়িগুলি এবং বিশেষ রেল কোচ ভারী যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন জেনারেটর ও ক্রায়োজনিক ট্যাঙ্কার নিয়ে যাচ্ছে । সঙ্কটের এই সময়ে পরিষেবা যাতে সর্বোচ্চ পরিমাণে দেওয়া যায় বাহিনীর সদস্যরা তার জন্য নানা পন্থা উদ্ভাবন করছেন । এছাড়াও চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জামের যোগান বাড়ানো ও হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধির জন্য সশস্ত্র বাহিনী নানা উদ্যোগ নিয়েছে । বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং তাদের পরিবারের জন্য ২০০৩ সালে এক্স সার্ভিসম্যান কনট্রিবিউটারি হেল্থ স্কিম (ইসিএইচএস) শুরু হয়েছে । যেহেতু সেনাবাহিনীর হাসপাতালগুলিতে শয্যা কম তাই ইসিএইচএস তালিকাভুক্ত হাসপাতালে সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা পেয়ে থাকেন । কিন্তু সঙ্কটের এই সময়ে এইসব হাসপাতালে রোগীর ভীড় বেশি হওয়ায় প্রাক্তন সেনাকর্মীরা সেখানে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । এর ফলে ইসিএইচএস ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । সশস্ত্র বাহিনী এই পরিস্থিতিতে সকলের জন্য যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে ।কোভিড মহামারির সময়ে সেহত ওপিডি ব্যবস্থার মাধ্যমে অনলাইনে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রাক্তন সেনানি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা পেয়ে থাকেন । কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ই-সঞ্জিবনী অনলাইন পরিষেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এবং সেনাবাহিনীর প্রাক্তন চিকিৎসকরা সংক্রমিতদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন । এর পাশাপাশি বন্ধু রাষ্ট্র থেকে কোন চিকিৎসার সরঞ্জাম দেশে এসে পৌঁছালে সেই সরঞ্জাম যাতে নির্দিষ্ট গন্তব্য দ্রুত পৌঁছে যায় সেবিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় উদ্যোগের প্রতিটি পদক্ষেপে যুক্ত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে । সরকার এই মহামারির থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য সবরকমের উদ্যোগ নিয়েছে । সেই উদ্যোগে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও সাহায্য করছে ।

আরও পড়ুন….শ্যামনগরে বিজেপি কর্মীর বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার বোমা