ধামসা মাদলের তালে বর্ষ শেষ ও বর্ষ বরণের উৎসবে মাতলেন বাঁকুড়ার আদিবাসীরা

ধামসা

ধামসা মাদলের তালে বর্ষ শেষ ও বর্ষ বরণের উৎসবে মাতলেন বাঁকুড়ার আদিবাসীরা। রীতি মেনে ধামসা মাদলের তালে পাহাড়তলির খোলা আকাশের নিচে বর্ষ শেষ ও বর্ষ বরণের উৎসবে মাতলেন বাঁকুড়ার শিউলিবনা গ্রামের আদিবাসীরা। ঝাঁ চকচকে ডিস্কো থেক বা রঙিন পানশালায় নয়্ । বছর এখানে শেষ হয় ধামসা মাদলের বোলের মাদকতায় । নতুন বছরের নতুন সূর্য ওঠে মেঠো আদিবাসী সুরের কোরাসে ।

 

নিয়ম মেনে ফি বছর খোলা আকাশের নীচে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় ঘেঁষা শিউলিবনা গ্রামের মানুষ মেতে ওঠেন বর্ষ শেষের খেরোয়াল তুকৌ উৎসবে । এবছরও তার অন্যথা হল না । বর্ষ শেষের রাতে ধামসা মাদলের মাদকতায় ডুব দিলেন পর্যটকরাও ।

 

বাঁকুড়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম শুশুনিয়া পাহাড় । সবুজে ঢাকা পাহাড়ের তলায় ছবি মতো সাজানো আদিবাসী গ্রাম শিউলিবনা । কথিত আছে আজ থেকে বছর পঁচিশ আগে ইংরাজি নববর্ষের দিন আর পাঁচ জনের মতোই এই গ্রাম লাগোয়া পাহাড়ি জঙ্গলে ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে পিকিনিক করতে এসেছিলেন এক সাধু । পিকনিকে এসে সেই সাধুর ভালো লেগে যায় শিউলিবনা গ্রাম ও গ্রামের আদিবাসী বাসিন্দাদের সহজ সরল জীবন যাত্রা । কিন্তু গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের অভাব নাড়া দেয় তাঁকে ।

 

আর ও পড়ুন     জম্মু-কাশ্মীরের বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে পদপিষ্ঠ হয়ে ১২ জনের মৃত্যু

 

পিকনিক সেরে সেই সাধু স্থানীয় রনবহাল গ্রামের শময়িতা মঠে ফিরে গেলেও ভূলতে পারেননি শিউলিবনা গ্রামের মানুষকে । ওই গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নতির জন্য সাধুর উদ্যোগে শুরু হয় নানা কর্মকান্ড । চাষ বাসে সহযোগিতা থেকে শুরু করে গ্রামের কচিকাঁচাদের শিক্ষা দীক্ষা, মহিলাদের স্বনির্ভরতার দিশা দেখানো থেকে শুরু করে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় শময়িতা মঠ । বছরের পর বছর ধরে সেই কর্মকান্ডের সুফল মিলতে শুরু করে ।

 

শিউলিবনা গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উঠতে শুরু করে । জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যে সাধুর অবদান রয়েছে সেই সাধুকে শিউলিবনা গ্রামের মানুষ ধারতিবাবা নামে পুজো করতে শুরু করেন । ধারতিবাবার সঙ্গে আলাপের দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে ইংরাজি বছরের শেষ ও শুরুর দিনগুলিতে নাচ গান সহযোগে উৎসব হিসাবে পালন করেন ওই গ্রামের মানুষ । সময়ের সাথে সাথে সেই উৎসবের ব্যাপ্তি বেড়েছে। এখন শুধু শিউলিবনা গ্রামের মানুষই নয় আশপাশের জেলা এমনকি ঝাড়খন্ড , ওড়িশা , আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসী শিল্পীরা যোগ দেন শিউলিবনা গ্রামের এই বর্ষ শেষ ও নববর্ষের উৎসবে।

 

বর্ষ শেষের সূর্য যখন শুশুনিয়া পাহাড়ের পশ্চিম কোলে ঢলে পড়ে তখন শিউলিবনা গ্রামের মাঠ থেকে শুশুনিয়া পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ধামসা মাদলের তাল। যার টানে শিউলিবনার মাঠে হাজির হন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুশুনিয়া পাহাড় দেখতে হাজির হওয়া পর্যটকরা। রাতভর আদিবাসী রমনীদের মেঠো সুরের কোরাসের মাদকতায় ডুব দেওয়া শুশুনিয়া পাহাড়ের পূর্ব কোনে পরের দিন একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে উদিত হয় নতুন বছরের নতুন সূর্য ।