নিম-হলুদে সুরক্ষা

শুধু কি রূপচর্চায়? অবশ্যই না! নিমপাতা ও হলুদের গুণাগুণ স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার ক্ষেত্রেও সীমাহীন। এগুলোর কার্যকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। নিম ও হলুদের উপকারিতার কথা বিস্তারিত জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি।

কাঁচা হলুদ

হলুদে আছে কারকিউমিন, যা একধরনের এসেনশিয়াল তেল। আর যে হলুদের রং যত গাঢ় তাতে কারকিউমিনের পরিমাণ তত বেশি। আমাদের দেশে যে হলুদ হয় তাতে কারকিউমিনের পরিমাণ থাকে ২-৩ শতাংশ। আর এই কারকিউমিন হলো ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন। কাঁচা হলুদের কারকিউমিন শরীরে ডিটক্স হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীরে নানা রকম বিষাক্ত পদার্থ জমে বিভিন্ন ধরনের অসুখ হয়। যেমন হজমজনিত সমস্যা, আলসার বা এই জাতীয় শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে হলুদ বেশ কার্যকর। রূপচর্চা ছাড়া ঔষধি হিসেবে হলুদ খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে, যা মেনে চললে ভালো। কাঁচা হলুদ খেতে হলে অবশ্যই কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে তারপর খেতে হবে।

আর হলুদের রস শরীরের বাহ্যিক অংশে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো করে জ্বাল দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। মধু বা গুড় দিয়ে হলুদ নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আয়ুর্বেদিক মতানুযায়ী এটি শরীরের জন্য খুব উপকারী। কোথাও কেটে গেলে হলুদগুঁড়ার সঙ্গে সরিষার তেল মিশিয়ে লাগিয়ে রাখলে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত ভালো হয়ে যায়। এ ছাড়া হলুদ ও সরিষার তেলের এই মিশ্রণ গরম করে পায়ের নখ কনুই বা ফাঙ্গাসে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

হলুদের রস ও নিমের রস জ্বাল দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। পরে গোসলের সময় পানিতে নিয়মিত ব্যবহার করলে অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সমপরিমাণ হলুদ ও নিমের রস জ্বাল দিয়ে তাতে সমপরিমাণ তিলের তেল মিশিয়ে শরীরের ফাটা অংশগুলোতে প্রতি রাতে ব্যবহার করলে এই সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান হবে।

নিমপাতা
নিম শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। নিমের কচি পাতা যখন আসে তখন প্রথম শিরা থেকে প্রথম পাঁচটি পাতা নিয়ে রসুন, কাঁচা মরিচসহ ভর্তা করে গরম ভাত দিয়ে খেলে সারা বছর শরীরের যেমন রোগ প্রতিরোধ হয় তেমনি গুটিবসন্ত, ঘামাচিও হয় না। আর বিশেষ করে যাঁদের প্রচুর ঘামাচির সমস্যা রয়েছে তারা গরম আসার আগে এই খাবারটি খেয়ে নিন। তাহলে একদমই ঘামাচির সমস্যায় ভুগতে হবে না। অনেকে নিমপাতার বড়ি খেয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বড়ির চেয়ে এই ভর্তাই বেশ কার্যকর। কারণ নিমপাতার বড়িতে ক্লোরোফিলের যে গুণাগুণ থাকে, তা নষ্ট হয়ে যায়।

উকুনের সমস্যার জন্যও নিমপাতা বেশ কার্যকর। তাই উকুনের সমস্যা দেখা দিলে নিমপাতার রস পুরো চুলে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিরোধেও নিমপাতা খুব ভালো কাজ করে। নিমপাতা জ্বাল দিয়ে পানির রং সবুজ হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। অনেক সময় মাথার তালুতে ছোট ছোট গুটির মতো দেখা যায়। শ্যাম্পু করার সময় এই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে নিলে এই গুটির সমস্যাটি চলে যাবে। এ ছাড়া নিয়মিত এই পানি ব্যবহারে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। নারকেল তেলের সঙ্গে নিমপাতার রস ভালো করে জ্বাল দিয়ে রেখে দিয়ে তা নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

মনে রাখা ভালো
 কাঁচা হলুদের রস কখনোই সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়। হলুদের রস বের করে নিয়ে বেসন, ময়দার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।
 হলুদ দেওয়ার পরপরই রোদে যাওয়া যাবে না। এতে করে ত্বকে কালচে ভাব চলে আসবে।
 নিমপাতার গোড়ার দিকের অংশগুলো না নিয়ে ওপরের অংশগুলো ব্যবহার করা ও খাওয়া উচিত। কারণ এতে ক্লোরোফিলের পরিমাণ বেশি থাকে।