ফের যেন ৯০ দশকের ত্রাস ফিরছে কাশ্মীরে, কাশ্মীর ছাড়ছে হিন্দু ও শিখরা

দশকের

ফের যেন ৯০ দশকের ত্রাস ফিরছে কাশ্মীরে। কাশ্মীর ছাড়ছে হিন্দু ও শিখরা। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বাড়াতেই সাধারণ মানুষকে নিশানা করছে সন্ত্রাসীরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, উপত্যকায় বসবাসকারী কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং পরিযায়ী মানুষ। চলতি মাসে সন্ত্রাসীরা ১১ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এঁদের মধ্যে ৭ জন অমুসলিম সম্প্রদায়ের। উপত্যকার মানুষের চোখে মুখে ভয়ের ছবি। ফের পালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

 

উল্লেখ্য,  রালিভ, গালিভ, ইয়া চালিভ। অর্থাৎ ধর্মান্তরিত হও, মরো অথবা পালিয়ে যাও। এই শ্লোগান তুলেই ১৯৯০ এ কাশ্মীর জোরে কাশ্মীরি হিন্দুদের বেছে বেছে খুন-ধর্ষণ করা শুরু হয়েছিল কাশ্মীরের ভারতবিরোধী ইসলামিক জনতা দ্বারা। মারা গিয়েছিল বহু, ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিল প্রচুর কাশ্মীরি হিন্দুকে। ধ্বংস হয়েছিল হাজার মন্দির থেকে হিন্দুদের সম্পত্তি, এক বস্ত্রে পালিয়ে এসেছিল লক্ষ লক্ষ কাশ্মীরি হিন্দু। একইসঙ্গে কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়ে ছিল অন্য রাজ্য থেকে আসা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হিন্দু রা। সেই একই স্মৃতি ফিরে আসছে আবার কাশ্মীর জুড়ে।

 

এছড়াও ২০১০ সালের মার্চ মাসে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে সময়, সরকার জানায় ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে উপত্যকায় ২১৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী, উপত্যকায় সন্ত্রাসের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পরে ৬০ হাজারেরও বেশি পরিবার স্থানান্তর করেছিল। এর মধ্যে ৪৪ হাজার পরিবার রাজ্য ত্রাণ-পুনর্বাসন কমিশনারের কাছে নিবন্ধিত করেছে। এই ৪৪ হাজার পরিবারগুলির মধ্যে ৪০ হাজার ১৪২ হিন্দু পরিবার, ২ হাজার ৬৮৪ মুসলিম পরিবার এবং ১ হাজার ৭৩টি শিখ পরিবার ছিল।

 

যদিও সেই একই স্মৃতি ফিরে আসছে আবার কাশ্মীর জুড়ে। ৩৭০ ধারা ঘটানোর পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছিল কাশ্মীর জুড়ে। সন্ত্রাসবাদি হামলা প্রায় কবে এসেছিল। কাশ্মীর জুড়ে বাড়ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নত জীবনযাত্রার ছোঁয়া পাচ্ছিল কাশ্মিরী জনগণ। কিন্তু তা সহ্য হবার নয় কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের, কাশ্মীরিদের উন্নতি সঙ্গে প্রাচুর্যতার ধারাকে পুনরায় নষ্ট করতে ৯০ দশকের মতই বেছে বেছে ভূস্বর্গের হিন্দু-শিখ দের করতে শুরু করেছে কাশ্মীরের বিভিন্ন ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। গত তিনদিনে পাঁচজন হিন্দু-শিখ কে হত্যা করেছে তারা।

 

এর ফলে আবার ভয় পেতে শুরু করেছে সেখানকার সংখ্যালঘুরা। ৯০ দশকের মতোই প্রাণের ভয়ে কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়ছে হিন্দু-শিখ রা। আশঙ্কা বাড়ছে ৯০ দশকের মত আবার কাশ্মীরের হিন্দু গনহত্যার, কাশ্মীরি উদ্বাস্তু যারা ফিরে এসেছিল তারা আবার আশঙ্কা করছে একদিন মসজিদ থেকে হিন্দুদের দেশে আবার ঘোষণা হতে পারে,’ রালিভ, গালিভ, ইয়া চালিভ।

 

আরও  পড়ুন    কেমন ছিল আগেকার দিনের আইন আদালত

 

উপত্যকায় ভয়ের পরিস্থিতি দেখে একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত জানান, ‘আমি গত ২০ বছর ধরে এখানে একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি এবং কয়েক বছর আগে পদোন্নতির পর উপত্যকায় ফিরে এসেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, তাই আমরা জম্মুতে ফিরে এসেছি।” তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজের আওতায় চাকরি দেওয়া অনেক কাশ্মীরি পণ্ডিত জম্মুতে ফিরে যাচ্ছে। আরেক কাশ্মীরি পণ্ডিত জানান, “কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনও একই রকম যা আমরা ১৯৯০ সালে দেখেছিলাম।”

 

তাঁর দুই ছেলে কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় কাজ করে এবং উপত্যকায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর ফিরে এসেছে। কাশ্মীরি পণ্ডিত সংগ্রাম সমিতির সভাপতি সঞ্জয় টিকু গত সপ্তাহে বলেছিলেন, “৫০০ এবং এরও বেশি মানুষ বুদগাম, অনন্তনাগ এবং পুলওয়ামা থেকে অভিবাসন শুরু করেছে। আরও অনেক কাশ্মীরি পণ্ডিত উপত্যকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যেন ১৯৯০-এর স্মৃতি ফিরছে।”