লোকসভায় অবশেষে পাশ হয়ে গেল কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। সংসদে বিরোধীদের প্রবল হইচইয়ের মধ্যে লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। ভারতের সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হল আজ, সোমবার। ২৫ দিন চলবে অধিবেশন। ৩০টি বিল পাশ হওয়ার কথা। সবথেকে উল্লেখযোগ্য তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। অধিবেশনের প্রথম দিনেই লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে গেল সেই প্রত্যাহার বিল। বিরোধীদের আলোচনার দাবিও খারিজ করে দিয়েছে মোদি সরকার। এর পর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল বিল।
এদিন সকালে অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা এই কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল নিয়ে আলোচনার দাবি তোলেন। তার পরেই মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। এক ঘণ্টা পর ফের শুরু হয় অধিবেশন। কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র তোমর। কয়েক মিনিটের মাথায় পাশ হয়ে যায় বিল। এতে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। প্রসঙ্গত, আজ অধিবেশনে নিজেদের সব সাংসদকে উপস্থিত থাকতে বলে হুইপ জারি করেছিল কংগ্রেস এবং বিজেপি। কংগ্রেস চেয়েছিল এই বিল নিয়ে মোদি সরকারের দিকে আঙুল তুলবে। কিন্তু সেই সুযোগই এল না।
এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, তাঁর সরকার সব প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি। ‘সরকার বা সরকারি নীতির বিরুদ্ধে যা প্রতিবাদই হোক, তা যেন সংসদ এবং স্পিকারের পদের মর্যাদা না ক্ষুণ্ণ করে।’ তাঁর এই আবদেন যে এই অধিবেশনেও খুব একটা খাটবে না, তা এক প্রকার স্পষ্ট। কারণ এবারও সংসদে মোদি সরকারের বেশ কিছু বিতর্কিত বিল পাশ করানোর কথা। তার মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ সংক্রান্ত বিলটি। রবিবার সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দেননি প্রধানমন্ত্রী। সেই নিয়ে তাঁর দিকে আঙুল তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ করেছে, তিনি রীতি ভেঙেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলে যোগ দেওয়ার রীতি বাধ্যতামূলক নয়। মোদিই প্রথম এই রীতি চালু করেছিলেন।
এদিন কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে ভারতের সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই হই হট্টগোল শুরু করেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা। সংসদের ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তার পর সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন বেলা ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেন স্পিকার। এদিন বেলা ১২টায় অধিবেশনের ফের শুরু হতেই কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল, ২০২১ পেশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। ধ্বনিভোটে তা সঙ্গে সঙ্গেই পাশ হয়ে যায়। বিরোধীরা কৃষি আইনের উপর আলোচনার যে দাবি করেছিলেন, তা খারিজ করে দেয় সরকার পক্ষ।
এদিকে, এখনও বিক্ষোভরত কৃষকরা রাজধানী দিল্লি সীমানায় বসে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুরুপরবের দিন মৌখিক ভাবে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি ছিল, সংসদে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহার না হওয়ার পর্যন্ত অবস্থান চলবে। সোমবার শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই এই নিয়ে আলোচনার দাবি তোলেন বিরোধীরা।
আর ও পড়ুন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন উদয়ন গুহ, কী সেই অভিযোগ?
সরকার পক্ষ সেই দাবি না মানায় শুরু হয় তুমুল শোরগোল। এদিকে, বিরোধীরা চেয়েছিলেন কৃষি বিল প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হোক। আলোচনায় উঠে আসুক লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যার মতো ঘটনা। কিন্তু সেই সুযোগই দিল না মোদি সরকার। কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাশ হলো কোনও আলোচনা ছাড়াই। মাত্র চার মিনিটে। তাতেই বেজায় চটলেন বিরোধীরা। তাঁদের কণ্ঠরুদ্ধ করার অভিযোগ তুললেন।
এদিন কংগ্রেস হুইপ জারি করেছিলো, সব সাংসদকে অধিবেশনে থাকতে হবে। চেয়েছিল মোদি সরকারের টুঁটি চেপে ধরতে। কিন্তু হল না কিছুই। ক্ষোভ প্রকাশ করল তৃণমূলও। টুইটারে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন লিখলেন, ‘শূন্য প্রতিশ্রুতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি পেগাসাস নিয়ে আলোচনা থেকে সরে গিয়েছিলেন। তাই বাদল অধিবেশন ভেস্তে গেছিল।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আপনি সব নীতি ভেঙে রীতিমতো বুলডোজার চালিয়ে কৃষি আইন এনেছিলেন। সমস্যা হল, আপনার মন্ত্রিসভার একজনও আপনাকে বলে না, যে সংসদটা আপনার মন কি বাত নয়। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরি বললেন, আমরা বিল পেশের সময় লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম। কোনও আলোচনা ছাড়াই বিল পাশ হয়ে গেল। এর আগেই আইন প্রত্যাহারের ছ’টি বিল পাশ হয়েছে সংসদে। প্রতি ক্ষেত্রেই আলোচনা হয়েছিল।’
কংগ্রেসের আর এক সাংসদ শশী থারুর বললেন, ‘ওরা যা করল, তা ভুল। আমরা কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, আন্দোলনে মৃতদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। সরকার সেই সুযোগই দিল না।’ এসব অভিযোগ যদিও উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। তিনি বললেন, ‘বিরোধীদের উদ্দেশ্য আসলে কী, বুঝতেই পারছি না। দাবি ছিল, কৃষি আইন প্রত্যাহার। এমনকী বিরোধী দলগুলোও তাই চেয়েছিল।