ভূতগ্রামে দুর্গাপুজো নয়, এই গ্রাম জেগে ওঠে লক্ষ্মী পুজোতে

ভূতগ্রামে

ভূতগ্রামে দুর্গাপুজো নয়, এই গ্রাম জেগে ওঠে লক্ষ্মী পুজোতে।  বছর দশেক আগে রেললাইন লাগোয়া এলাকায় এক দিন একটি পুকুর পাড়ে এক মহিলার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।তারপর থেকেই সেই গ্রামে ঘটতে থাকে নানা ধরনের অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা।  রাতবিরেতে বিভিন্ন বাড়ির দরজায় ইট ছোড়া বা টোকা মারার আওয়াজ শোনা যেত প্রায় প্রতিদিন।

 

ভূতগ্রামে সেলফি দুর্গাপুজো নয়, এই গ্রাম জেগে ওঠে লক্ষ্মী পুজোতে। লক্ষ্মী পুজোর সময়ে এই গ্রামে গেলে চোখে পড়বে সেলফি তুলতে ব্যস্ত একঝাঁক জেন-ওয়াই। সেলফি তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তা আপলোড হয়ে যাচ্ছে ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রামে। সঙ্গে  হ্যাশট্যাগ—#লক্ষ্মীপুজো #লক্ষ্মীপুজো@বেনাগ্রাম #সেলফিউইথভূতগ্রাম!

 

বিগবাজেট বা থিমের পুজো হয় না এই গ্রামে, রাজা-মহারাজার ঐতিহ্যের কোনও গল্পগাথাও জড়িয়ে নেই। তা সত্ত্বেও এই গ্রামে লক্ষ্মী পুজোয় মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। আসলে ভূতগ্রাম নামে লোকমুখে পরিচিত এই জনশূন্য গ্রামে একমাত্র লক্ষ্মীপুজোতেই পা পড়ে মানুষের।

 

আর ও  পড়ুন    শরীরে এনার্জি ফিরে পেতে ঘুরে আসুন নির্জন সুন্দরী এই জায়গা থেকে

 

আর সেই সুযোগেই ভূতের উপদ্রবের জন্য কুখ্যাত এই গ্রামে ভীড় জমান অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমীরা।   চিত্তররঞ্জন-নিয়ামতপুর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বাঁ দিকে পড়ে জঙ্গলে ঘেরা একটি কংক্রিটের রাস্তা। সেই পথ ধরে সামান্য এগোলেই এই বেনা গ্রাম। কুলটির নিকটবর্তী এই গ্রামে বছরের অন্য সময়ে ঢুকলে গা-ছমছম করাটা অতি স্বাভাবিক।

 

তবে আগে এমন ছিল না। এক সময়ে প্রায় শ’খানেক পরিবারের বাস ছিল এই গ্রামে। তাছাড়া গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে রেললাইন, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও কোনও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু তার পরেও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন সমস্ত মানুষ। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারই ধারণা, রেল লাইনকে কেন্দ্র করে নানা বেআইনি কাজকর্ম চালানো দুষ্কৃতীরাই সাধারণ মানুষকে ত্রস্ত করে রাখার জন্য এইসব কাণ্ডকারখানা ঘটাত।

 

কিন্তু সেই সমস্ত দুষ্কৃতী কখনওই ধরা পড়েনি। ফলে অনেকেরই ধারণা হয়, ভূতেই করছে এই সব উপদ্রব। ভয়ের চোটে একে-একে সব ক’টি পরিবারই গ্রাম ছাড়ে। রটে যায় ভূতের ভয়ে উজাড় হয়ে গিয়েছে বেনাগ্রাম।

 

লোকমুখে গ্রামটি পরিচিতি অর্জন করেন ভূতগ্রাম নামে। তবে সারা বছরের জনহীন ছবিটি সরিয়ে রেখে লক্ষ্মী পুজোর সময় আলো জ্বলে গ্রামে। জনশূন্য গ্রামের প্রাক্তন বাসিন্দারা এক দিনের জন্য ফিরে আসেন শুধু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতে। কারণ অলক্ষ্মীর গ্রামে লক্ষ্মীর আবাহন জরুরি বলেই মনে করেন ধর্মপ্রাণ গ্রামবাসীরা। তাই গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেও লক্ষ্মী পুজো বন্ধ হতে দেননি তাঁরা।

 

তবে লক্ষ্মী পুজোর চেনা ছবিটিরও বদল ঘটেছে গত কয়েক বছরে। বেনাগ্রাম আসানসোল পুরনিগমের ৬১ নম্বরের আওতাধীন হওয়ার পরে কাঁচা রাস্তা বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে কংক্রিটে। পরিস্থিতি বুঝে নতুন করে প্লটিং-এর কাজ শুরু করেছেন প্রোমোটাররাও। তবে পানীয় জল আর বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এখনও বাকি। গ্রামবাসীদের ফের গ্রামে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় জাঁক বেড়েছে লক্ষ্মীপুজোরও।

 

মের মানুষ মনে প্রাণে চাইছেন, ‘ভূতগ্রাম’-এর তকমা ঘুচুক এবার। তাই তাঁদের গ্রামে বহিরাগতরদের লক্ষ্মী পুজো দেখতে আসার ব্যাপারেও তাঁদের প্রবল আপত্তি। কারণ তাঁরা জানেন, বাইরের হুজুগে লোকেদের আনাগোনা মানেই ভূত নামক পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটা। আর যাঁরা ঝটিকা সফরে আসছেন বেনা গ্রামে লক্ষ্মীপুজো দেখতে, তাঁদের সাফ কথা— আলো, ঢাক, উলু, শঙ্খধ্বনির চিরন্তন ঐতিহ্যমণ্ডিত লক্ষ্মী পুজো আর এযুগে কোথায় পাবেন তাঁরা! পাশাপাশি রয়েছে ভূতের ভয় মেশানো গা-ছমছমে অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ।